জয়দেবপুর রেলক্রসিংয়ে ভোগান্তি
আমাদের গাজীপুর রিপোর্ট : প্রায় ১৩৮ বছরের পুরনো এই শহরের প্রবেশ মুখেই রয়েছে জয়দেবপুর রেলক্রসিং। আর এই রেলক্রসিং পার হয়ে তবেই না যেতে হয় শহরের গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গায়। এদিকে গাজীপুর দেশের সর্ববৃহৎ সিটি করপোরেশন হলেও এখনো অব্দি মানুষের মনে ভোগান্তির আরেক নাম জয়দেবপুর রেলক্রসিং। স্থানীয় মানুষেরা মনে করেন, চীনের দু:খ হুয়াংহো নদী, মিশরের দু:খ নীল নদ হলেও গাজীপুর বাসির দু:খ নামে খ্যাত জয়দেবপুর রেলক্রসিং। কারন যেখানে সব সময়ই তীব্র যানযট লেগে থাকে।
গাজীপুর পৌরসভা থেকে দেশের সবচেয়ে বৃহৎ সিটি করপোরেশন হিসেবে মর্যাদা লাভের পর শহর থেকে মহানগরীতে পরিণত হয়েছে। সেই সাথে নগরাঞ্চলে জনসমাগমের পরিমানটাও বেড়েছে কয়েকগুণ। রাজধানী ঢাকার একেবারেই পাশের শহর হলো গাজীপুর হওয়ায় দিন দিন ক্রমাগতই বেড়েই চলেছে মানুষের সংখ্যা। ব্যস্ততম গাজীপুর মহানগরীর কেন্দ্রবিন্দুতেই রয়েছে ব্যস্ততম রেল স্টেশন ‘জয়দেবপুর জংশন’। আর এই জংশন দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার মানুষের যাতায়াত রয়েছে ট্রেনে। প্রতিবার ট্রেন চলাচলের সময় এই লেভেল ক্রসিং ব্যরিয়ারে আটকা পড়তে হয় সড়কে চলাচল কারী যানবাহন ও পথচারীদের। অথচ এই ক্রসিংয়ের কারণেই তৈরী হয় দীর্ঘ যানযট। যা একেবারে ক্রসিংয়ের পূর্ব প্রান্ত শহরের রাজবাড়ি পর্যন্ত চলে যায় এবং পশ্চিম প্রান্ত থেকে একেবারে শিববাড়ি পর্যন্ত। ফলে এই লেভেল ক্রসিংয়ের যানযটের কারণে শহরে প্রতিদিন গড়ে মানুষের ৮ ঘন্টা সময় নষ্ট হয়।
গাজীপুর মহানগরীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যেতে হলে কোন না কোন ভাবেই রেল ক্রসিং পাড় হয়েই যেতে হয়। ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে জয়দেবপুর রেলক্রসিংয়ের কথা। শহরে যতগুলো ক্রসিং আছে তারমধ্যে অন্যতম হলো-জয়দেবপুর রেলক্রসিং। যা মানুষের মনে ভোগান্তির আরেক নাম। এর মধ্যে অবৈধ অটোরিকশা চলাচলের সঙ্গে ব্যস্ততম শহরে যানজটের আরেকটি বড় কারণ হয়ে দাড়িঁয়েছে জয়দেবপুর জংশনের রেলক্রসিং। ক্রসিংয়ের অদূরেই জয়দেবপুর জংশন। ময়মনসিংহ,কিশোরগঞ্জ,উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গের সব ট্রেন এই পথ দিয়ে আপ-ডাউন করে। সে হিসেবে দেখা যায়, দিন-রাত মিলিয়ে প্রতিদিন এই রেলক্রসিং দিয়ে ৭২টি ট্রেন আপ-ডাউন করায় প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানযটের। প্রতিটি ট্রেন আসা-যাওয়ার সময় স্বাভাবিক ভাবেই দু’পাশের পথ আটকে দেওয়া হয়। এরপর শুরু হয় ট্রেন আসার অপেক্ষা। প্রতিবার ট্রেন আসা-যাওয়ার সময় অন্তত ১৫ মিনিট আটকা পড়তে হয় সড়ক ব্যবহারকারীদের। এতে করে লেভেল ক্রসিংয়ে তৈরি হওয়া যানজটের কারণে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে ৮ কর্মঘন্টা আর সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন উন্নীত হলেও রেলক্রসিংয়ের সমস্যার সমাধান হয়নি এখনো। উল্টো নগরে বেড়েছে মানুষের চাপ। রেলক্রসিংয়ের পাশে রেল লাইনের ওপর আড়াআড়ি বসেছে দোকানপাট। এগুলো সবই ভ্রাম্যমাণ দোকান। এদের মধ্যে ফল বিক্রেতার সংখ্যাই বেশি। ট্রেন কাছাকাছি চলে র্এলে ফলের ঝুঁড়িগুলো ঝটপট তারা তুলে নেন। ট্রেন চলে গেলে আবারও সেই আগের মতোই অবস্থা। ফলে প্রায় প্রতিদিনই এখানে ঘটছে নানা দূর্ঘটনা।তার ওপর আইন মানার নেই কোন প্রবণতা।
সরেজমিন দেখা গেছে, নেকেই ট্রেন চলে আসার আগে রেলক্রসিংয়ের প্রতিবন্ধক ফেলার পর নীচ দিয়ে যাতায়াত করেন। মোটর সাইকেল আরোহীদের অনেকেই সেগুলো উঁচু করে বিপজ্জনক ভাবে পাড় হয়ে যান।
নগর বাসীর দাবী, এখানে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা অতিব জরুরী।ট্রেন আসার সময় গুরুতর রোগীদের নিয়ে বেহাল অবস্থার মধ্যে পড়তে হয় স্বজনদের এমনকি রোগীদের নিয়ে চলাচলকারী এম্বুলেন্সগুলোকে। নগরের কোথাও আগুন লাগার সংবাদ পেলে জয়দেবপুর ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি গুলোকেও আটকে থাকতে দেখা গেছে এই রেলক্রসিংয়ে। ততক্ষণে আগুনে পুড়ে সব শেষ।
এ বিষয়ে জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো: আবু হানিফ বলেন, নিয়ম হচ্ছে যখন একটা ট্রেন মৌচাক রেলস্টেশন থেকে ছাড়ে তখনই আমাদের গেইট বন্ধ করা। কিন্তু শহরের যানযট নিরসণের জন্য আমরা আরও ৫-৭ মিনিট পরে রেল ক্রসিংয়ের গেইট বন্ধ করি। সারাদিন আমাদের অন্তত ৭০ বার এই গেইট বন্ধ করতে হয়। আর এতে করে শহরে তৈরি হয় ভীষণ যানযট। ক্রসিংয়ের ওপর যদি ওভারপাস নির্মাণ করে দিলে এই সমস্যার সমাধান হতো বলেও মনে করেন এই কর্মকর্তা।
Comments are Closed