ঘুরে এলাম রাষ্ট্রপতির মিঠামইনের বাড়ি
সাইদুল ইসলাম রনি, কাপাসিয়া প্রতিনিধি: বাংলাদেশের প্রথম প্রধান মন্ত্রি বঙ্গতাজ তাজউদ্দিন আহমদের জন্মভূমি কাপাসিয়া স্টুরিষ্ট এসোসিয়েশন ২টি বাসে চড়ে কাপাসিয়া বাজার থেকে সকাল ৭ টার দিকে যাত্রা শুরু করে। করিমগঞ্জের চামড়া বন্দর পৌাছি তখন বেলা ১১টা। নৌকা ছাড়তেই চোখ জুড়িয়ে গেল, শরীরও জুড়াল হিমেল বাতাসে। সাদা পানি ঘোলা জল কালী নদীর কালো জল, শরতের নীল আকাশ, পূবালী বাতাসে ইঞ্জিন চালিত ট্রলার ভট ভট আওয়াজও আমাদের কানে যেন সুরেলা হয়ে ওঠে। কালোপানির নদী পেরোতে না পেরোতে হাওরের দেখা পাই। চারদিকে দিগন্তজুড়ে পানির মাঝে সাদা সাদা হাওরের স্থল, এটাই জনপদ পার হওয়ার রাস্তা । পানিমগ্ন ইটের ভাটা, পানির উপরে বিদ্যুতে খুটি, আর নানা রকমের নৌযান দেখতে দেখতে আমরা পৌছেছি হাওরে।
কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাজুড়ে বিস্তীর্ণ বিশাল হাওর এলাকা। বছরের প্রায় নয় মাসই পুরো এলাকায় থইথই করে পানি আর পানি। এ সময়ে এই অঞ্চলের জীবনযাত্রা আমাদের নাগরিক চোখে অন্য রকম। দিনব্যাপি ঘুরে তেমনটাই মনে হয়। রাষ্ট্রপতির বাড়ি মিঠামইনে এলে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ থাকেন এ ঘরেই।
৩১ আগস্ট দুপুরে নেমেছিলাম কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের রাষ্ট্রপতির বাড়ির ঘাটে। নেমেই একটু সামনে গিয়ে দেখা মিলল মসজিদের তখণ জুমার নামেেজর আযান হল। সবাই চলে গেলাম নামায আদায় করতে। নামায শেষে হঠাৎ চোখে পড়ল একটা স্থলভাগ, সেটার চারদিকে সবুজ। কাছে যেতে চেনা গেল নারকেলগাছের সারি। এই বাঁকটা ঘুরলেই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বাড়ি।
মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে। সহযাত্রী সাংবাদিক নুরুল আমীন সিকদার সবাইকে নিয়ে নেমে পড়ে ডাঙ্গায়। রাষ্ট্রপতির বাড়ির দুটো অংশের একটায় লেখা ‘হাজী তায়েব উদ্দিন’ রাষ্ট্রপতির বাবার নাম। পাশে হলুদ একতলা ঘরের বারান্দায় সিরামিকের তৈরি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের প্রতিকৃতি। বাড়ির চালের নিচে ইংরেজিতে লেখা আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট। আমাদের দেখে এগিয়ে এলেন সম্পর্কে রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক এমপি। ‘চলেন, ভেতরটা দেখবেন।’ ফটক দিয়ে আমরা ঢুকলাম পরিপাটি এক উঠানে। মাঝখানে বড় নিমগাছ। উঠোনের চারদিকে কয়েকটা ঘর। একেকটা ঘর রাষ্ট্রপতির ভাই বা বোনের। ওপরে টিন দেওয়া ছোট্ট দোতলা ঘরটা ‘উনি মিঠামইন আসলে এ ঘরেই থাকেন।’ কিছুক্ষন পরেই এমপি মহোদয় আমাদের জন্য চায়ের আয়োজন করে ফেলেন। চা আড্ডার পর বিদায় নিয়ে দুপুরের খাবারে জন্য চলেগেলাম মিঠামইন ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন হোটেল কাঁচা-লঙ্কায়।
মিঠামইন উপজেলার পুরোটাই হাওরবেষ্টিত। উপজেলা সদরে কোনো যানবাহন চলে না। কিছু রিকশা চোখে পড়েছে। শরিফপুর গ্রামের কাজল মিয়া(৩৫) জানালেন, বাস, ট্রাক দেখতে এখানকার মানুষ কিশোরগঞ্জে যান।
সৌরবিদ্যুৎ হাওর এলাকার উপজেলাগুলোর কিছু কিছু স্থানে পল্লী বিদ্যুৎ সরবরাহ আছে। তবে সে বিদ্যুৎ কখন আসে কখন যায়, সে এক ধাঁধাঁই যেন। তাই বাজারগুলোতে সৌরবিদ্যুৎ বেশ জনপ্রিয় হয়ে আছে। আবার বসতবাড়িতেও আছে এই সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা।
আরেকটু সামনে যেতেই চোখে পড়ল মঠিামইন উপজেলা অডিটরিয়াম, সাব রেজিষ্ট্রি অফিস, পরিসংক্ষান অফিস, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, থানা ভবন। সাথেই তৈরি হচ্ছে বিশাল আর্কৃতির লঞ্চ। থানা ঘাটে রয়েছে নৌ এম্বোলেঞ্জ, স্পিটবোর্ট। প্রায়ই সন্ধাঘনিয়ে আসছে আমরাও বাড়ির দিকে রওনা হলাম। সবাই ট্রলারে এসে আনন্দ ভ্রমনের কর্মসূচির রেফেল ড্র নিয়ে মেতে উঠি। কিছুক্ষন যেতে দেখা মিলল দ্বিপ সবাই নেমে ফটোসেশন ও সাতারের জন্য নদীতে নেমে পড়েন । পুনারাই ট্রলারে উঠে রাতের আধারে নদী পাড়ি দেয়। অবশেষে রাত ৮.৩০ মিনিটে চমড়াবন্দর এসে পৌছি। চা আড্ডা সেরে বাসে উঠি। রাত ১০.৩০ টার দিকে টোকবাজারে পৌছে মলাই চা আড্ডা চলে। ১১.৩০ টায় কাপাসিয়া বাজারে পৌছার পর বিদায় কালে সকলের হাতে পুরুস্কার তুলে দেওয়া হয়।
Comments are Closed