Main Menu

দখল-দূষণে মৃতপ্রায় শ্রীপুরের খালগুলো

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি: গাজীপুরের শ্রীপুরের লবনঙ্গ খাল, হাজার বছরের ইতিহাসের একটি অংশ। এই খালকে কেন্দ্র করেই, এই এলাকার কৃষি নির্ভর অর্থনীতি গড়ে উঠেছিল। কিন্তু নব্বই এর দশকের শুরু থেকেই শ্রীপুরে শিল্পকারখানা বিকাশমান হওয়ার পর থেকেই খালগুলোর দূষন শুরু হয়। বর্তমানে এই খালের শ্রীপুর অংশে প্রায় ৩০ কিলোমিটার জুড়েই চলছে দখল ও দূষণ। শিল্প কারখানার হুমকিতে এক সময়ের খর¯্রােতা এই খালটি এখন মৃত প্রায়। শুধু লবনঙ্গ খাল নয় শিল্পকারখানার দূষণ ও দখলে শ্রীপুরের ধাউর খাল, টেংরার খাল, কাটার খাল, সেরার খাল, বৈরাগীরচালার খাল, তরুণের খাল, সালদহ খালের অবস্থাও খুবই করুণ।

bty

bty

একটা সময় ছিল, কৃষকই চাষাবাদের প্রয়োজনে এসব খাল রক্ষায় ভূমিকা রাখতো। কিন্তু,  শিল্পায়ানের ফলে শ্রীপুরে দ্রুত কৃষি জমি কমে যাওয়ায় এখন খাল রক্ষায় কারো কোন ভূমিকা নেই। অতীতে পুরো উপজেলায় প্রায় শতাধিক কিলোমিটার জুড়ে এসব খালের ব্যাপ্তি থাকলেও বর্তমানে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। সরকারী এ খাল দখল ও দূষণে কোথাও কৃষক আবার কোথাও প্রভাবশালী বা শিল্পকারখানার মালিকরা জড়িয়ে পড়ছে।

শুধু দখল করেই  থেমে থাকছে না তাঁরা, নিজেদের ইচ্ছেমত বিভিন্ন জায়গায় খালের গতিপথও পরিবর্তণ করছে । আর দূষণের কারণে খালের জীব বৈচিত্র্যে কোন অস্তিত্ব এখন আর অবশিষ্ট নেই।
SRiPUR(GAZiPUR)--29.01.2018--___-_____ _________ _________ ________ (3)
সরেজমিন দেখা যায় শ্রীপুর পৌর এলাকার এক্স সিরামিক্স নামের একটি কারখানা লবনঙ্গ খালের কেওয়া মৌজার আর.এস-৯৩৮৪ দাগের প্রায় অর্ধকিলোমিটার অংশে দখলবাজি চালিয়েছেন। আর বর্জ্য তো অপসারণ তো চলছেই। বেশ কয়েকটি জায়গায় খালের গতিপথেরও পরিবর্তন আনা হয়েছে। বর্তমানে এ কারখানার অংশে খালের অস্তিত্ব আবিস্কার করা কঠিন।
যদিও খাল দখলের বিষয়টি অস্বীকার করে কারখানার ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান বলেন, খালের দু’পাশের জমিই আমাদের। এই কারখানায় পাঁচ বছর আগে যখন যোগদান করি তখন এটি ছিল একটি মরা খাল। নক্সা অনুযায়ী খালের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিয়েই আমরা সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করছি।

bty

bty

এ ছাড়াও লবনঙ্গ খালের মাওনা ও ধনুয়া মৌজার অংশে রিদিশা নিটেক্স, সেলভো ক্যামিকেল, নোমান গ্রুপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান, এশিয়া কম্পোজিট, আদিব ডাইং, দি ওয়েলটেক্সসহ আরো কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান দখল ও দূষণে এগিয়ে রয়েছেন।

অপরদিকে, উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের অংশে রেনেটা গ্রুপ ও আলী পেপার নামক কারখানার দখলে অস্তিত্ব হারিয়েছে ধাউরের খাল। শ্রীপুর পৌর এলাকার একমাত্র বৈরাগীর চালা খালটি শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ও দখলে সংকুচিত হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি শ্রীপুর পৌরকর্তৃপক্ষ ওই খালের গড়গড়িয়া মাষ্টারবাড়ি অংশে কয়েকমাস যাবৎ বর্জ্য অপসারণ করায় এখন পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে পড়ছে।
SRiPUR(GAZiPUR)--29.01.2018--___-_____ _________ _________ ________ (4)
গোসিঙ্গা ও রাজাবাড়ি ইউনিয়নের তরুণের খালটি এখন দখল ও দূষণে বিভিন্ন অংশে মৃত। অধিকাংশ জায়গায় খাল ভরাট করে কৃষি জমিতে পরিণত করেছে স্থানীয়রা। এ ছাড়াও শ্রীপুরের লোহাগাছ বিন্দুবাড়ি এলাকার কাটার খালটি বিভিন্ন অংশে দখলে সংকুচিত হয়ে পড়ায় এই এলাকার পানি নিষ্কাশনের পথরোধ হওয়ায় জলাবদ্ধতার কবলে রয়েছে এলাকার হাজার হাজার লোকজন।

সাইটালিয়া গ্রামের আব্দুল কাদের লাল মিয়া জানান, ধাউরের খালটি একসময় নদীর মতো ছিল। এ খালটিকে ঘিরেই ব্যবসা বাণিজ্যের পরিচালনা হতো। কিন্তু বর্তমান দখলে খালটি সংকুচিত হওয়ার পাশাপাশি অনেক জায়গায় বিলীন হয়ে পড়েছে।
SRiPUR(GAZiPUR)--29.01.2018--___-_____ _________ _________ ________ (5)
চকপাড়া গ্রামের আবু সাঈদ জানান, লবলঙ্গ খালে এক সময় দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ পাওয়া যেত। আমরা এ খালের পানি থেকেই চাষাবাদ করতাম। এখন দূষণের কারণে কোন ধরনের জলজ প্রাণী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

পৌর এলাকার বৈরাগীর চালা গ্রামের আজাহারুল ইসলাম বলেন, বৈরাগীরচালা খালটি এলাকার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ ছিল। এখন পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে পড়ায় বর্ষাকালে পৌর এলাকার অধিকাংশ অংশই জলাবদ্ধতার কবলে থাকে।

ধনুয়া গ্রামের কৃষক আহাম্মদ আলী জানান, এক সময়ের লবলঙ্গ খালটির মাধ্যমে দ্রুত পানি নিষ্কাশিত হতো, আবার প্রয়োজনের সময় এখাল থেকেই পানি নিয়ে জমির চাষাবাদ করতাম। এখন খালের বিভিন্ন অংশ দখল হয়ে যাওয়ায় বর্ষার সময় জলাবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে কয়েকবছর ধরে জমিতে ফসলহানি হচ্ছে।

বিন্দুবাড়ী জিওসি গ্রামের আব্দুল হামিদ জানান, তরুণের খালটি ৪০ফুট প্রস্থ ছিল। এলাকার কৃষকের অন্যতম ভরসা ছিল এ খাল। কিন্তু দখলের কারণে এখন খালের বিভিন্ন অংশ শুধু সরকারী কাগজ পত্রেই সীমাবদ্ধ, বাস্তবে নেই।

পরিবেশ অধিদপ্তর গাজীপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আব্দুস ছালাম জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর ইনফোর্সমেন্ট অভিযানের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় শিল্পপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক খাল, বিল ও নদী দখল-দূষণের অভিযোগে বিভিন্ন কারখানায় অভিযান চালিয়ে ক্ষতিপূরণ বা জরিমানা করা হয়েছে। এধরণের অভিযান অব্যাহত আছে।

এব্যাপারে গাজীপুর জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, ইতিমধ্যে খালগুলোর তালিকা তৈরী করা হয়েছে। এখন পর্যায়ক্রমে খাল গুলোতে থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে খননের মাধ্যমে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা হবে এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।






Comments are Closed