আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনিয়ম: গাজীপুর সদরের ইউএনওকে বদলী
আমাদের গাজীপুর রিপোট: গাজীপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে নিম্নমানের উপকরণ ও সঠিক মালামাল ব্যবহার না করা হয়নি। এছাড়াও বেশ কয়েকটি অনিয়মের অভিযোগে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম সাদিক তানভীরকে বরিশালে বদলী করা হয়েছে। একই সাথে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শাহরিয়ার মাহমুদকে বান্দরবানে বদলি করা হয়েছে। গত ২২ মার্চ তাদের বদলি করা হয়। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান এই দুই কর্মকর্তার বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, গাজীপুর সদর উপজেলার ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ভূমিহীন ও আশ্রয়হীন ব্যক্তিদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের যে ঘর তৈরি করা হচ্ছিল, তাতে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার ও অনিয়মের অভিযোগ উঠে। পরে নির্মাণাধীন ১১২টি ঘর ভেঙে ফেলা হয়। ঘটনাটি তদন্তের জন্য গাজীপুরের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মামুন সরদার ও গাজীপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বারেক মিয়াকে নিয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার গাফিলতি, তদারকির অবহেলাসহ বেশ কিছু অনিয়ম পায় কমিটি। ১৬০টি ঘরের মধ্যে ১১২টি ঘরের নির্মাণ কাজে মারাত্মক অনিয়ম ও ক্রটি ধরা পড়ে।
নিম্নমানের উপকরণ ও সঠিক মালামাল ব্যবহার না করায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কাজ হওয়ার পর গাজীপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১১২টি ঘর ভেঙে ফেলা হয়। ঘরগুলো আংশিক নির্মাণ ও পরে নতুন শ্রমিক নিয়োগ করে ভাঙার কাজে প্রকল্পের প্রায় ৬২ লাখ টাকা অপচয় হয়েছে। ভেঙে ফেলা ঘরগুলো আবার নির্মাণ করা হবে। ঘরগুলো আংশিক নির্মাণ করা হয়েছিল গাজীপুর সদরের বাড়িয়া, পিরুজালী, ভাওয়াল মির্জাপুর ও সিটি করপোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৩টি স্থানে। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে এসব এলাকায় মোট ১৬০টি ঘর নির্মাণের কথা। গত ডিসেম্বরে শুরু হওয়া কাজ আগামী জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। ঘরগুলো নির্মাণের দায়িত্বে ছিলেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম সাদিক তানভীর। তাঁর নির্দেশেই চলতি মাসের শুরুতে ৪ থেকে ৫ দিনে ১১২টি ঘর ভাঙা হয়।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ঘরগুলো ভাঙার জন্য কোথাও ঘরপ্রতি তিন হাজার আবার কোথাও পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ঘর নির্মাণের অগ্রগতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পাঠানো হয়। প্রতিবেদনে চলমান কাজ ২০ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। একটি ঘর নির্মাণে বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৬৪ হাজার ৫০০ টাকা। ২০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে থাকলে প্রতিটি ঘরে খরচ হয়েছে ৫২ হাজার ৯০০ টাকা। তাতে ভেঙে ফেলা ১১২টি ঘরের মোট ব্যয় হয়েছে ৫৯ লাখ ২৪ হাজার ৮০০ টাকা। এ ছাড়া ঘরগুলো ভেঙে ফেলায় শ্রমিকদের জন্য খরচ হয়েছে ঘরপ্রতি গড়ে ৩ হাজার টাকা। সে হিসাবে ১১২টি ঘর ভাঙার কাজে মোট ব্যয় হয়েছে ৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। মোট অপচয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬২ লাখ ৬০ হাজার ৮০০ টাকা।
Comments are Closed