কাপাসিয়ায় মাদ্রাসা অধ্যক্ষের অনিয়ম দুর্নীতি তদন্তসাপেক্ষে বিচার দাবী এলাকাবাসীর
সাইফুল ইসলাম খান, গাজীপুর : গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রাওনাট হাছানিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি আর জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। এই দ্বীনি শিক্ষার প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষের স্বেচ্ছাচারীতায়া ক্ষুব্ধ অভিভাবক ও এলাকাবাসী লিখিত ভাবে কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্তের দাবী জানিয়েছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, অধ্যক্ষ আব্দুর রহমান নাশকতা মামলায় একমাসের অধিক সময় কারাগারে হাজতবাসের পর ছাড়া পেয়ে মাদ্রাসায় নিজেকে উপস্থিতি দেখিয়ে বেতন উত্তোলন, মাদ্রাসার অধ্যক্ষের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকুরী করা, অধ্যক্ষের যোগসাজসে মাদ্রাসার বিএসসি শিক্ষক মো: আমির আলীর শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রতারণামূলক বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িয়ে বহু লোকের নিকট থেকে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। দীর্ঘ তিন বছরের বেশী সময় আত্মগোপনে থাকাবস্থায় ওই শিক্ষককে মাদ্রাসায় উপস্থিতি দেখিয়ে অধ্যক্ষ যোগসাজস করে বেতন ভাতা উত্তোলন করেন। এছাড়া মজিবুর রহমান নামে একজন শিক্ষককে কৌশলে বাধ্যতামূলক অবসর দিয়ে ১৫ মাসের বেতনের টাকা উত্তোলনের পর আত্মসাৎ করা, মাদ্রাসার শিক্ষার মান উন্নয়নে সময় না দিয়ে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে বেশী সময় দেয়া, ম্যানেজিং কমিটিকে পাত্তা না দেয়া, মাদ্রাসার খাতায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশী হলেও বাস্তবে ছাত্র-ছাত্রী কম থাকা ও জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকারও অভিযোগ করা হয়েছে। মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির ছেলে মো: শফিকুর রহমান মোল্লা কাপাসিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগে অধ্যক্ষ আব্দুর রহমানের অনিয়ম-দুর্নীতি ও অর্থআত্মসাৎ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবী করেন।
ম্যানেজিং কমিটির সাবেক অভিভাবক প্রতিনিধি মমতাজ উদ্দিন জানান, অধ্যক্ষ আব্দুর রহমানের অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারীতায় মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। ম্যানেজিং কমিটির কোনো সভায়ই অধ্যক্ষের কাছ থেকে মাদ্রাসার আয়-ব্যায়ের হিসাব জানা যায়নি। একই সাথে দুই প্রতিষ্ঠানে চাকুরী বিষয়ে অধ্যক্ষ জানিয়েছিলেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স থেকে পদত্যাগ করেছি। তাঁর বিরুদ্ধে নাশকতাসহ বিভিন্ন অপরাধে কয়েকটি মামলা আদালতে বিচারাধীন। সপ্তাহে ৩/৪ দিন মামলার হাজিরা ও অফিসের কাজে মাদ্রাসার বাইরে থাকেন। মাদ্রাসায় শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবী জানান সাবেক এই অভিভাবক প্রতিনিধি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সুত্র নিশ্চিত করে জানান, অধ্যক্ষ আব্দুর রহমান মাসাধিককাল জেলখানায় আটক থাকাবস্থায়, আদালতে মামলার হাজিরা দিতে গিয়ে এমনকি শ্বশুরের মৃত্যুর পর বিগত ১৩ নভেম্বর থেকে ২৪ নভেম্বর ২০১৭্ইং পর্যন্ত কুমিল্লায় অবস্থান করার সময়ও মাদ্রাসার হাজিরা খাতায় অধ্যক্ষ উপস্থিতি স্বাক্ষর দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কম্পানির সাবেক একজন কর্মকর্তা জানান, চার বছর আগে অভিযোগ উঠার পর অধ্যক্ষ আব্দুর রহমান মাদ্রাসার চাকুরী থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষকে কাগজ দিয়েছিলেন।
মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি জয়নাল আবেদীন জানান, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানান রকম অনিয়ম-দৃর্নীতির অভিযোগ অনেক দিনের। আমি সভাপতি থাকাবস্থায় কমিটির সহ সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে মাদ্রাসার অধ্যক্ষের পদ থেকে নিজের পদত্যাগ দেখিয়ে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স এ চাকুরি করেছেন। এসব বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের একজন উপ সচিব সেই সময় তদন্ত করেছিলেন। আমার কমিটির মেয়াদ শেষ হলে কাগজপত্র মাদ্রাসার নথিতে জমা রেখে আসছিলাম। অধ্যক্ষ আব্দুর রহমানের কাছে কখনো স্বচ্ছতা পাওয়া যায়নি। এরকম একজন দুর্নীতিবাজ লোক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হলে ওই প্রতিষ্ঠান ভাল চলতে পারে না।
বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আওয়ামীলীগ নেতা ও দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গাফ্ফার জানান, অভিযোগকারী মো: শফিকুর রহমান মোল্লা মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির ছেলে। তিনি আমাকে অধ্যক্ষ আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয় গুলো জানিয়েছেন।
কাপাসিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: রকিব হাসান জানান, অধ্যক্ষ আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে, দ্রুতই তদন্তে যাব। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিযুক্ত অধ্যক্ষ আব্দুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন।
Comments are Closed