Main Menu

বিশ্বমানের হাসপাতাল এখন গাজীপুরে

বিশ্বমানের বিশেষায়িত এক হাসপাতাল গড়ে উঠেছে বাংলাদেশে। যাতে রয়েছে বিশ্ববিখ্যাত ডাক্তারদের চিকিৎসা সেবার সব সুযোগ-সুবিধা। আর এতে দিন দিন বিদেশমুখী রোগীদের দেশের চিকিৎসায় আস্থা ফিরে আসছে। তবে চিকিৎসার এত সব সুযোগ-সুবিধা থাকলেও রোগীর অভাব যেন পূরণ হচ্ছে না হাসপাতালটির।

হাসপাতালটিতে প্রবেশেই আধুনিক সাজ-সজ্জা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে চোখ জুড়িয়ে যায় আগতদের। রাজধানী ঢাকার পাশেই গাজীপুরের সীমান্ত এলাকা সাভার (নবীনগর)-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কাশিমপুরের তেতুইবাড়িতে অবস্থিত শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে হাসপাতালে গিয়ে অবাকই হতে হয়। কারণ রাজধানীর অন্য সাধারণ হাসপাতালগুলোর সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। এখানে নেই কোনো দালালের দৌরাত্ম্য। নেই কোনো বিশৃঙ্খলা। শুধু তাই নয়, বিশেষায়িত এই হাসপাতালে গেলে যে কারও মন ভালো হয়ে যাবে এর নান্দনিক অবকাঠামো দেখে। চিকিৎসাসেবার জন্যও এখানে আছে অনেক আয়োজন। আছে আধুনিক প্রযুক্তির সব চিকিৎসা সরঞ্জাম। সেবা দিতে সবসময়ই প্রস্তুত আছেন দক্ষ চিকিৎসক, নার্স ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা। প্রয়োজনে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শও নিতে পারবেন। শুধু তাই নয়, হাসপাতালটি একদিন বিশ্বের সেরা হাসপাতালে পরিণত হবে বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মূলত চিকিৎসার জন্য যেন বিদেশে যেতে না হয় সেই লক্ষ্য নিয়েই গড়ে তোলা হয়েছে শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল। সংশ্লিষ্টরা জানান যে, হাসপাতালের অবস্থান ও বিশেষায়িত হওয়া এবং খরচ বেশি, যাওয়ার ক্ষেত্রে যানবাহন সমস্যা, মালয়েশিয়ার তত্ত্বাবধানে চলছে এমন ভ্রান্ত ধারণাই রোগীদের এ হাসপাতালে না যাওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ। তবে সুখবর, বিশেষায়িত এই হাসপাতালটি এ বছরের মধ্যে বিশ্বের অন্যান্য নামি-দামি হাসপাতালের ন্যায় আইএমএস (ইন্টিগ্রেটেড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) লাইসেন্স পেতে যাচ্ছে। যা রোগীদের কাছে আরও অধিকতর আস্থাভাজন করে তুলবে।

হাসপাতালটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো দেশখ্যাত বিভিন্ন ডাক্তার রোগী দেখতে বসেন নিয়মিত। এমনকি মালয়েশিয়ার বিখ্যাত  ডাক্তাররাও বসেন। রয়েছে দরিদ্র রোগীদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা। সুবিধাবঞ্চিতদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবার সুযোগ রয়েছে। রয়েছে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত চিকিৎসার বিশেষ ব্যবস্থা। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী আর নির্যাতিত নারীদের সেবায় অগ্রাধিকার দেওয়া হয় এখানে। ৩০ শতাংশ রোগী, যারা সুবিধাবঞ্চিত তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। দরিদ্র রোগীরা সেবা নিতে পারেন এক-তৃতীয়াংশ খরচেই। হাসপাতাল সূত্র জানায়, রোগীর সার্বক্ষণিক সেবার জন্য রয়েছে অন্তত ৭০ জন নার্স (সেবিকা)। রয়েছে ২৩ জন রেসিডেনসিয়াল কনসালটেন্ট, ৯জন বাংলাদেশি খণ্ডকালীন কনসালটেন্ট, রয়েছে ৮জন কেপিজে হেলথকেয়ারের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এ ছাড়া নিয়মিত ২৪ ঘণ্টা রোগী দেখেন ১৫ জন মেডিকেল অফিসার। রয়েছে দুর্ঘটনা ও জরুরি বিভাগ। রয়েছে আইসিইউ, ইন পেটিয়েন্ট সার্ভিস। রয়েছে রোগীদের অতিথি ভবন। রয়েছে মেডিসিন, নিউরোমেডিসিন, স্ত্রী রোগ ও প্রসূতি, জেনারেল অ্যান্ড ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি, শিশুরোগ, চক্ষু বিভাগ, নাক কান গলা বিভাগ, মাইক্রোবায়োলজি, চর্ম, অ্যালার্জি ও ভিডি রোগ, হাড় ও আঘাতজনিত রোগ, হৃদরোগ, গেস্টোএন্টালজি ও হেপাটলজি, লিভার রোগ, ইউরোলজি, ডায়টারি, প্যাথলজি। রয়েছে ২৪ ঘণ্টা এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। আছে ৪ডি আল্ট্রাসাউন্ড, এমআরআই (১.৫ টেসলা), অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার। রয়েছেন মালয়েশিয়ান ৪ নার্স (সেবিকা)। বিশ্বমানের এই চিকিৎসালয়টি মালয়েশিয়ান স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান কেপিজের (কামপুলান পেরুতান জহুর) সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠা করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। ২১৫ কোটি টাকায় নির্মিত ২৫০ শয্যার এই হাসপাতাল ও কলেজ যাত্রা শুরু করে ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর। কেপিজে পরিচালিত এই হাসপাতালে বাংলাদেশি ও মালয়েশিয়ান চিকিৎসকরা সেবা দিচ্ছেন। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মালয়েশিয়ার প্রখ্যাত নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ কেপিজে হেলথকেয়ার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যাপক দাতো ডা. লোকমান সায়েম হাসপাতালে  রোগী দেখছেন। পাশাপাশি ওইদিন একটি সেমিনারেও অংশ নেন তিনি। শেখ ফজিলাতুন নেছা মেমোরিয়াল হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মালয়েশিয়ান নাগরিক জাইতুন বিনতে সুলাইমান বলেন, আন্তর্জাতিকমানের হাসপাতালে যেসব সেবা থাকে, তার সবকিছু আছে এখানে। এটি বাংলাদেশের অন্যতম সেরা হাসপাতাল। এখানে আমরা দ্রুতই ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করব।

মালয়েশিয়ার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা নিয়মিতই চিকিৎসা সেবা দিতে ছুটে আসেন শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতালে।

কেপিজের বিশেষায়িত হাসপাতালের রেডিওগ্রাফি ও অনকোলজি (ক্যান্সার) বিশেষজ্ঞ ডা. আমিনউদ্দিন রহমান বিন মো. মেইদিন নিয়মিত রোগী দেখেন এখানে। চিকিৎসাসেবা দেন মালয়েশিয়ার প্রখ্যাত নাক-কান-গলা  রোগ বিশেষজ্ঞ কেপিজে হেলথকেয়ার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যাপক দাতো ডা. লোকমান সায়েম। মাসে একবার রোগী দেখেন কুচিং স্পেশালিস্ট হাসপাতালের অর্থপেডিক ও ট্রমাটোলজির বিশেষজ্ঞ ডা. ওয়াং চুং চেক, কুচিং স্পেশালিস্ট হাসপাতালের অ্যাডাল্ট রিকন্সট্রাকটিভ অর্থপেডিক ও স্পট সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. লি উ গুয়ান। খণ্ডকালীন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে আরও সেবা দেন মালয়েশিয়ার কেপিজে হেলথকেয়ার বারহাদের বেশ কয়েকজন চিকিৎসক। রোগী দেখেন মালয়েশিয়ার কেপিজে আম্পাং পুত্রি বিশেষায়িত হাসপাতালের ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ দাতো ডা. মাহমুদ আওয়াং কেচহিক। এডক্রাইন ও স্তন সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. নাকিয়াহ ইব্রাহিম, হৃদরোগ ও কার্ডিওলজি বিশেষজ্ঞ দাতো ডা. মো. ফিকরি আবদুল্লাহ, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ দাতো ডা. সিন্ডামোহান নামাসিভায়াম। অপরদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও নাক-কান-গলা (ইএনটি) বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক ও চক্ষুু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. দ্বীন মো. নুরুল হক, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রোমাটোলজি অ্যান্ড অর্থপেডিক সার্জন অধ্যাপক ডা. আর. আর. কৈরী, ইনস্টিটিউট অব লেজার সার্জারি ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. ইয়াকুব আলী, কার্ডিওলজিস্ট অধ্যাপক ডা. এইচ আই লুত্ফর রহমান খান ও অধ্যাপক ডা. আফজালুর রহমান। হেপাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সের পরিচালক ও নিউরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ এবং লিভার ও পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ ডা. মিজানুর রহমান। হাসপাতালের নির্মাণকাজ শুরু এবং সেবা কার্যক্রমের সূচনা দুটো দিনই হাজির ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি বছরের শুরুর দিকে চিকিৎসাসেবা নিতেও তিনি গিয়েছেন সেখানে। নিজেই টিকিট কিনে নাম নিবন্ধন করান। হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় প্রথমে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ। অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত প্রধানমন্ত্রীর নাক-কান-গলা পরীক্ষা করেন। চক্ষু পরীক্ষা করেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. দ্বীন মো. নুরুল হক।

হাসপাতালে বিভিন্ন সময় চিকিৎসা নিতে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি যদি কখনো অসুস্থ হয়ে পড়ি, তাহলে আমাকে বিদেশে নেবেন না। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে উঠাবেন না। আমি দেশের মাটিতেই চিকিৎসা নেব। এই হাসপাতালে চিকিৎসা নেব। শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজ সম্পর্কে এভাবেই আস্থার কথা এখানকার চিকিৎসকদের জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।






Comments are Closed